বিদেশি কোম্পানির আড়ালে দেশীয় কোম্পানি
কাজ পাইয়ে দিয়ে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ
- আপলোড সময় : ২০-১১-২০২৫ ১২:৩৮:২৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২০-১১-২০২৫ ১২:৩৮:২৯ অপরাহ্ন
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ তিনটি বিমানবন্দরের ৪ প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ৭৩০ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। বিদেশি কোম্পানির আড়ালে দেশিয় কোম্পানি দিয়ে কাজ করিয়ে এই প্রকল্প থেকে ২০০ কোিট টাকা আত্মসাৎ। প্রকল্পের কাজ দেয়া হয় আভিয়েশন ঢাকা কনসোটিয়াম (এডিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে।এর সঙ্গে সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে যুক্ত করা হয় এরোনেস ইন্টান্যাশনাল লিমিটেডকে।
অনুসন্ধানকালে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রকল্পের তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ২১ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এ প্রকল্প থেকে ক্রয়-সংক্রান্ত বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজের কাজসহ বিভিন্ন কাজে নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়া হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় এজেন্ট এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে উক্ত কাজে সম্পৃক্ত করে এই প্রকল্প থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাত করেন আসামিরা।
দ্বিতীয় মামলায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতে তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মুহিবুল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক, মো. হাবিবুর রহমান, সিএনএস মেইনটেনেন্স বিভাগের পরিচালক আফরোজা নাসরিন সুলতানা, পরিচালক (পরিকল্পনা) এ কে এম মনজুর আহমেদ, এরোনেস-এর মালিক লুৎফুল্লাহ মাজেদ ও এমডি মাহবুব আনামকে আসামি করা হয়েছে। মোট ১০ জনকে আসামি করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানববন্দরেরর ‘ইনস্টলেশন অব রাডার উইথ সিএনএস-এটিএম (কমিউনিকেশন, নেভিগেশন অ্যান্ড সারভিলেন্স-এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) শিরোনামে রাডার নির্মাণ কাজে এরোনেস ইন্টারন্যাশনালকে যুক্ত করা হয়। প্রকল্পের কাজে সর্বশেষ হিসাব অনুসারে ব্যয় করা হয় ৭৩০ কোটি টাকা। যা বেবিচকের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়। যার মধ্যে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে বেআইনিভাবে এরোনেস ইন্টারন্যাশনালকে সেখানে যুক্ত করে ওই প্রকল্প থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসামিরা।
তৃতীয় মামলায় কক্সবাজার বিমানবন্দরের মো. আব্দুল মালেক, মো. হাবিবুর রহমান, এরোনেস ইন্টারন্যাশনালের মালিক লুৎফুল্লাহ মাজেদ, এমডি মাহবুব আনাম, মো. শফিকুল ইসলাম এবং কক্সবাজার বিমানববন্দর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায় চতুর্থ সংশোধিত) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. ইউনুস ভূঁইয়া।
এজাহারে জানা যায়, ওই প্রকল্পের কাজে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) নামের একটি চীনা কোম্পানিকে কাজটি পেতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছিলেন তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ অন্যরা। ওই প্রকল্পের কাজেও নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়। এখান থেকেও হাতিয়ে য়ো হয় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
চতুর্থ মামলায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানববন্দরের দুই হাজার কোটি টাকার নতুন টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করে অগ্রিম বিল হিসেবে ২১২ কোটি টাকা ছাড় করার অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এ মামলায়ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মো. মুহিবুল হকসহ অন্যদের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া জনেন্দ্রনাথ সরকার, এম মফিদুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক, সুপািরনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. হাবিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরোনেস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আনাম, পরিচালক লুৎফল্লাহ মাজেদ, প্রকল্প পরিচালখ মইদুর রহমান মো. মওদুদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব শাহ জুলফিকার হায়দার (বর্তমান উপসচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সাবেক যুগ্ম সচিব মো. আনিছুর রহমানকে (বর্তমান অতিরিক্ত সচিব) আসামি করা হয়েছে।
এজাহজারে বলা হয়, আসামিরা ক্রয় প্রক্রিয়ার বিদ্যমান আইন লঙ্ঘন করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে তুলেছিল। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক এখতিয়ার লঙ্ঘন করে ব্যয় বৃদ্ধি, ব্যয় মজুরি, পরিদর্শন, অর্থ ছাড়করণ সংক্রান্ত বিধান ও অনুমোদন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানববন্দরসহ তিনটি বিমানবন্দরের চার প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ তারিক সিদ্দিকসহ ৪৩ জনকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সোমবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, সব কাজ পেয়েছিল এরোনেস ইন্টানন্যাশনাল লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এরোনেস ইন্টারন্যাশনালকে কাজ পাইয়ে দিতে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তাঁর সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মুজিবুল হক, যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান, বেবিচকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান, ইেেরানেস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আনাম, পরিচালক লুৎফুল্লাহ মাজেদসহ ৪৩ জন জড়িত ছিলেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার, দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাডার বসানোর কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে একটি বিদেশি কোম্পানিকে ৭৩০ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। বিদেশি কোম্পানির আড়ালে দেশিয় কোম্পানি দিয়ে কাজ করিয়ে এই প্রকল্প থেকে ২০০ কোিট টাকা আত্মসাত করা হয়।রাডার বসানোর প্রকল্পের বাইরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ (থার্ড টার্মিনাল) প্রকল্পে বিধি লঙ্ঘন করে এরোনেস ইন্টানশ্যানালকে কার্যালদেশ দেয়া হয়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় করা হয় ১৩ হাজার কোটি টাকা। পরে অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা করা হয়। দুককের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, অনিয়ম এই করে প্রকল্পের ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়।দুদক সূত্র জানায়, ঢাকার বিমানবন্দর ছাড়াও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানববন্দর আত্মসাত করা হয় শত কোটি টাকা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
আবু জাফর